শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার নিয়ম এবং সম্পূর্ণ গাইডলাইনস



শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ( invest in stocks)- বলা হয়ে থাকে, কোনো জিনিস এর বেসিক যত মজবুদ হয় সেই জিনিসটার সম্পর্কে ধারণা তত মজবুদ থাকে।  তাই আজকে এই লেখাটি হবে শেয়ার বাজার ইনভেস্ট এর বেসিক সকল জ্ঞান নিয়ে।  বিগেনার যারা থাকে তাদের বেশিরভাগ এর ই শেয়ার বাজার এর নাম শুনতেই ভয় লাগে।   ফিল্ম এর মধ্যে দেখে যে শেয়ার এর মাধ্যমে সব হারিয়ে শূন্য হয়ে পথের ফকির হয়ে গেছে।   আর এইজন্যই নেগেটিভ একটা চিন্তা মাথায় ডুকে যায়।  


আবার অন্যদিকে দেখা যায়,পরিচিত কেউ এই শেয়ার বাজার (Stock Market) এর মাধ্যমেই কোটিপতি হয়ে যাচ্ছে।  তাই শেয়ার বাজার নিয়ে নার্ভাসনেস কাজ করা,ভয় লাগা খুবই স্বাভাবিক।   তবে আজকে এই লেখার মাধ্যমে শেয়ার বাজার এর ইনভেস্ট সম্পর্কে সকল খুটিনাটি আলোচনা করা  হবে।  এর মাধ্যমেই আপনি জানতে পারবেন,আপনাকে কোথায় এবং কিভাবে ইনভেস্ট করতে হবে।  


প্রিয় পাঠকগন, আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন শেয়ার বাজারে ইনভেস্ট এর কথা।    কিন্তু কোনো প্রকার পূর্ব ধারণা ও প্রস্তুতি ছাড়া শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্ট আপনার জীবন দুর্বিষহ করে তুলতে পারে।    শেয়ার বাজারে ইনভেস্ট করার পূর্বে বেশ কিছু বিষয় সম্পর্কে আপনার জ্ঞান রাখা অবশ্যই প্রয়োজন।     যা আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত তুলে ধরবোঃ- 

স্টক মার্কেট ইনভেস্ট - invest in stocks 


প্রথমে, একটা মজার ব্যাপার বলি,যদি আপনার ফ্যামিলির কেউ আজ থেকে ৪০ বছর আগে WIPRO কোম্পানিতে  ১০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করত তাহলে আজকের দিনে সে ৭০০ কোটি টাকার মালিক থাকত।  তার মানে বুঝাই যাচ্ছে, শেয়ার বাজার কত বড় একটি সুযোগ সবার জন্য।  


শুধু WIPRO না, TVS, RFL, BEXIMCO এইসব কোম্পানির শেয়ার গত ৮-১০ বছরে ১০-১২ গুন বেশি রিটার্ন দিচ্ছে।  তবে কিছু কিছু এমন শেয়ার ও আছে যাদের বছরের পর বছর কোনো লাভ নেই, উল্টো লস হচ্ছে।  


এখানে কেবল একটি শেয়ার এর কথা বলা হলো।   তবে আপনি যখন ইনভেস্ট করবেন, তখন ২-১ টা কোম্পানির শেয়ার কিনবেন না।   কমপক্ষে ৮-১০ টা কোম্পানির ছোট ছোট শেয়ার কিনবেন যাতে লস হলেও সবকিছু একসাথে না যায়।   ২-১ টা কোম্পানি থেকে  লস হলেও অন্যটার লাভ দিয়ে যেন সেটা কভার করা যায়।  

স্টক মার্কেট কি রিস্কি?


ধরুন, আপনি আপনার কোনো বন্ধুর একটি ব্যবসায় ইনভেস্ট করলেন।   এখন সেই ব্যবসাটি যদি ভাল চলে তবে আপনার লাভ হবে, আর যদি ব্যবসায় লস হয় সেক্ষেত্রে আপনিও লস খাবেন।   


শেয়ার বাজার ও ঠিক তেমনি।    আপনি যদি কোনো কোম্পানির ছোট একটি শেয়ার কিনেন তার মানে আপনি অই কোম্পানির ছোট একটি অংশিদারিত্ব কিনলেন।    তার মানে আপনি এখন অই কোম্পানির একজন মালিক।   


এই জন্য ই এটার নাম শেয়ার।    এখন যদি অই কোম্পানি ডুবে যায় তাহলে আপনার টাকা ও ডুবে যাবে,আর যদি লাভ হয় তাহলে আপনিও লাভের অংশ পাবেন।    অনেক কোম্পানি আছে যারা লস খেতেই থাকে।   তবে অনেক কোম্পানিও আছে যারা কোটিপতি হয়ে গেছে এই শেয়ার এর মাধ্যমে।  


যেমনটা WIPRO কোম্পানির ক্ষেত্রে হয়েছে।  কেউ যদি ১০০ টাকাও ইনভেস্ট করত তখন তাহলেও সে আজ ৭ কোটি টাকার মালিক থাকত।   শেয়ার মার্কেট অবশ্যই রিস্কি কিন্তু প্রফিট ও কিন্তু ঠিক সেইরকমই।  

স্টক মার্কেট থেকে কতটুকু রিটার্ন পাওয়া সম্ভব


এটার উত্তরটাও অনেক টা আগের মতই।  বিজেনেস এ যতটুকু প্রফিট হবে সেইটুকু অংশ ই আপনার লাভের খাতার যুক্ত হবে।   ধরুন আপনি ১০০০ টাকা ইনভেস্ট করেছেন, হতে পারে আগামী বছর ১০% লাভ হল,অথবা ২০% লাভ হল, অথবা ৩০% লাভ হলো।  


সেই অংশটুকুই আপনার শেয়ার এর সাথে যুক্ত হবে।   এটার কোনো ফিক্সড ভ্যালু নেই।   তবে যখন কেউ ৮-১০ টা কোম্পানিতে ঠিক মত ইনভেস্ট করে তখন আশা করা যায় ৫ বছরে সে কমপক্ষে ১৮-২০% রিটার্ন পেতে পারে।  

শেয়ার বাজার বিনিয়োগ এর ধাপ


কিভাবে ইনভেস্ট করবেন শেয়ার বাজারে (invest in stocks)  এখানে মূলত ৪ টি ধাপ ফলো করতে হবে।   যেগুলো নিচে দেয়া হলোঃ- 

১.তথ্য সংগ্রহ


শেয়ার বাজার কি? কেন শেয়ার বাজার এ ইনভেস্ট করবেন,কতটুকু লাভ পেতে পারেন এইসব বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।  

২.ব্রোকার হাউজ নির্বাচন 


আমরা সবাই ব্যাংক এর সাথে পরিচিত।  ব্যাংক যেমন টাকা পয়সা লেনদেন করে,ব্রোকার হাউজ ঠিক তেমনি শেয়ার লেনদেন করে।   ব্রোকার হাউজ শেয়ার বাজার কেনাবেচার একটি অনুমদিত প্রতিষ্ঠান।   তবে ৩০০ এর ও বেশি ব্রোকার হাউক থেকে ভাল ব্রোকার হাউজ বাছাই করতে গেলেও কিছু ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে,


  • ব্রোকার হাউজ এর সুনাম কেমন?

  • কত বছর ধরে ব্যবসা করছে?

  • বর্তমান অনলাইন সেবায় তারা কতটুকু এগিয়ে?

  • তাদের কমিশন রেট কেমন?


সাধারণত ব্রোকার হাউজ আর গ্রাহকের বিনিয়োগ এর আকার ভেদ এ কমিশন রেট নির্ধারণ করা হয়।   এটি কমপক্ষে ৩০ পয়সা থেকে শুধু করে ৬০-৬৫ পয়সা পর্যন্ত হয়ে থাকে।  

৩.BO একাউন্ট খোলা


BO একাউন্ট মানে হচ্ছে Beneficiary Account।   ব্যাংক এ লেনদেন এর জন্য যেমন ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হয়,ঠিক তেমনি শেয়ার লেনদেন এর জন্য প্রয়োজন হয় BO একাউন্ট খোলা।  


BO একাউন্ট এর জন্য শর্তগুলো হলো,


  • বয়স ১৮+ হতে হবে।  

  • NID অথবা পাসপোর্ট এর ছবি

  • সদ্য তোলা ৩ কপি ছবি

  • আপনার ব্যাংক এর চেক এর কপি

  • নমিনির  NID কপি

  • সদ্য তোলা নমিনির এককপি ছবি



এইসব তথ্য নিয়ে আপনার পছন্দের ব্রোকার হাউসে খেলে তারা আপনার  BO একাউন্ট খুলে দিবেন।   BO একাউন্ট খুলতে হয় ব্রোকার হাউজ থেকে।   একাউন্ট খুলতে ২-৩ দিন সময় লাগে।  


একাউন্ট খুলা হয়ে গেলে Central Depository Bangladesh Limited(CDBL) থেকে আপনার মোবাইলে মেসেজ আসবে।  শেয়ার এর সকল তথ্য মেসেজ এর মাধ্যমে CDBL আপনাকে জানিয়ে দিবেন।  

৪. BO একাউন্ট এ টাকা জমা দেওয়া


একাউন্ট খুলা হয়ে গেলে শেয়ার কেনার জন্য টাকা জমা দিতে হবে BO একাউন্ট এ।   BO একাউন্ট এ কয়েকধাপে টাকা জমা দেওয়া যায়।   সরাসরি ব্রোকার হাউজে গিয়ে ক্যাশ টাকা জমা দেওয়া যায়, অথবা ব্রোকার হাউজের ব্যাংক একাউন্ট এ টাকা জমা দেওয়া যায় অথবা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমেও টাকা জমা দেওয়া যায়।  


আপনি টাকা জমা দিবেন ব্রোকার হাউজে,কিন্তু টাকা তুলবেন আপনার ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমে।  ব্রোকার হাউস থেকেও টাকা তুলা যায় তবে সেক্ষেত্রে আরো কিছু ধাপ সম্পন্ন করতে হয়।  তাই ব্যাংক এর মাধ্যমেই টাকা তুলা সুবিধাজনক।   সাধারণত ২-৩ দিনের মধ্যে টাকা BO একাউন্ট থেকে ব্যাংক একাউন্ট এ চলে আসে।  

নূন্যতম কত টাকা প্র‍য়োজন বিনিয়োগ এর জন্য


BO একাউন্ট খুলতে প্রথমে ৪৫০-৬০০ টাকার প্রয়োজন হয়।  তাছাড়া  BO একাউন্ট রক্ষণাবেক্ষণ এর জন্য প্রতি বছর জুন মাসে CDBL কে ৪৫০ টাকা চার্জ দিতে হবে।   শেয়ার বাজার এ ২ ভাগে বিনিয়োগ করা যায়।  


১. প্রাইমারি মার্কেট(IPO market)


২.সেকেন্ডারি মার্কেট।  


প্রাইমারি মার্কেট এ প্রথমে ৫-৬ হাজার টাকা হলেই বিনিয়োগ শুধু করা যায়।  কিন্তু সেকেন্ডারি মার্কেট এ নূন্যতম ২০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করলে ভাল।  


এখানে টাকার অংকটা ফিক্সড না।  কারণ অনেক কোম্পানি ফেস ভ্যালু এর উপর টাকা নিয়ে থাকে।  


একটি BO একাউন্ট দিয়ে কেবল একটি কোম্পানির শেয়ার এর জন্য আবেদন করা যায়।  

শেষ কথা


শেয়ার বাজার ও অই টাকা ই ইনভেস্ট করা প্রয়োজন যেইটুকু টাকা আপনার খালি পড়ে আছে।   ধরুণ আপনার কাছে ১০ হাজার টাকা আছে যা দিয়ে ২ মাস পর আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবেন।  


আপনি ভাবলেন এই ২ মাস টাকাটা শেয়ার এ দিয়ে রাখি।   আপাতত দৃষ্টিতে এটি ভূল না হলেও শেয়ার বাজার এর দৃষ্টিতে এটি মহাভূল।  কারণ ২ মাস পড়ে এই টাকা ১০-১৫% কমার সম্ভাবনাও আছে।  তাই আপনাকে এমন টাকা বিনিয়োগ করতে হবে যা আগামী ১ বছর আপনার কোনো কাজে আসবে না।  


এই জায়গাতেই অনেকে ভূল করে বসে।  তাই এই জায়গাটুকু খেয়াল রাখা জরুরি।  পরিশেষে বলতে চাই,শেয়ার বাজার এ টাকার চেয়ে যেই জিনিসটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হল, বুদ্ধি,ধৈর্য্য আর আত্নবিশ্বাস।  

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post